সিবিএল২৪:
কোভিড -১৯ একটি সংক্রামক রোগ যা সদ্য আবিষ্কৃত করোনাভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার, মারা যাচ্ছেন অনেকেই।
কক্সবাজারের বর্তমান অবস্থা তেমন একটা ভালো নেই। প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্ত হচ্ছে শ’য়ের উপরে।
চারদিকে চলছে করোনাভাইরাস আতঙ্ক, চলছে লকডাউন। দুঃসময়ে দিন পার করছে কক্সবাজারের মানুষগুলো। এমন দু:সময়েও সাধারণ মানুষের পাশে নেই সমাজের ধনপতিরা। ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’ নীতিতে ঘাপটি মেরে বসে আছেন সকলে। আবার কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ত্রাণ নিজের নামে বিতরণ করে ফটোসেশনের মাধ্যমে কুড়াচ্ছেন প্রশংসা।
এমন অবস্থায় ব্যাতিক্রমদের একজন কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সিএ আবুল মনজুর।
আবুল মনজুর, বয়স ৪২। কক্সবাজার শহরের মধ্যম বাহারছড়ায় বসবাস করেন। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মোঃ হাসিম উদ্দিন (২ নং সেক্টর) ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা। হোমিওপ্যাথির উপর তার রয়েছে প্রায় ৪০ বছরের অভিজ্ঞতা। তিনি ময়মনসিংহ হোমিও মেডিকেল কলেজ থেকে ডি.এইচ.এম.এস ডিগ্রী সফলতার সাথে পাশ করেন। বাহারছড়া মমতা হোমিও হল তিনিই পরিচালনা করেন।
বাবার পাশাপাশি অবসর সময়ে মনজুরও কিছুটা সময় দেয় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায়। তার শ্বশুর মাস্টার মরহুম আব্দুস শুক্কুরও একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা (১নং সেক্টর)।
তিন ভাই,তিন বোনের মধ্যে আবুল মনজুরই সবার বড়। তিনি বর্তমানে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সিএ পদে কর্মরত আছেন। চাকরির পাশাপাশি অবসরে তিনি আত্ননিয়োজিত থাকেন মানবসেবায়। কক্সবাজারে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর জনজীবনে আতঙ্ক ও হতাশা নেমে এলে আবুল মনজুর ছুটে যান আতঙ্কিত জনসমাজের মাঝে।সাধ্য অনুযায়ী যা পারেন তা নিয়েই তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন অসহায় মানুষের পানে।
এখনো পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়নি করোনাভাইরাস প্রতিরোধী কোন ঔষধ বা ভ্যাকসিন। তাই মানুষ করোনার ভয়ে হয়ে পড়েছে দিশেহারা।
এবছরের ২৯ জানুয়ারি ভারতের ইনফরমেশন ব্যুরো বা পিআইবি এর ট্যুইটার পেজে করোনাভাইরাস আটকানোর জন্য হোমিওপ্যাথি ঔষধ ‘Arsenicum Album 30’ এর নাম সাজেস্ট করে।সাথে শুরু হয়ে যায় জল্পনা-কল্পনা।
বর্তমানে করোনায় আতঙ্কিত বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই হোমিওপ্যাথি ঔষধ। তাতে পিছিয়ে নেই কক্সবাজারও।
দেশের প্রতিটি জেলায় হোমিও চিকিৎসকরা ইতোমধ্যেই আর্সেনিক এলবো-৩০ বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন।
হোমিও চিকিৎসকদের দাবি, করোনাভাইরাসের উপসর্গ প্রশমনে এটি বেশ কার্যকর। এরই মধ্যে সফল প্রয়োগ হয়েছে দেড় লাখের বেশি মানুষের ওপর। এমনকি তাদের দাবি, এ ঔষধ সেবন করে উপকার পাচ্ছেন সবাই।
তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ের সিএ আবুল মনজুর পারিবারি প্রতিষ্ঠান ‘মমতা হোমিও হল’ এর মাধ্যমে কক্সবাজার পৌরসভাসহ অন্যান্য এলাকার অসহায় মানুষের মাঝে ‘আরসেনিক এলবো-৩০’ বিতরণ করে যাচ্ছেন দিবারাত্রি। তিনি ইতোমধ্যেই কক্সবাজার পৌরসভার বাহারছড়া, কলাতলি, হলিডে মোড়, ঝাউতলা, বিমানবন্দর এলাকা , লাবনী পয়েন্ট, মোহাজের পাড়া, বাস স্টেশন, কালুর দোকান, পাহাড়তলী, সিকদার মহল, সিটি কলেজসহ ঝিলংজা ইউনিয়নের দরিয়া নগর, হিমছড়ির প্রায় ১২০০ গরীব পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন এই হোমিও ঔষধ। ভবিষ্যতে সাধ্য অনুযায়ী জেলাব্যাপী গরিব সমাজের মাঝে আর্সেনিক এলবো-৩০ বিনামূল্যে বিতরণের ইচ্ছা আছে তার।
চাকরির পাশাপশি তিনি কৃষিকাজেও সম্পৃক্ত। নিজে গাছ লাগান এবং অন্যকেও গাছ লাগাতে উৎসাহিত করেন।অবসর সময়গুলো কাটানোর জন্য তিনি শখের বশে পালন করেন নানান জাতের কবুতর।
‘কক্সবাজার লাইভ টুয়েন্টিফোর’ এর সাথে আলাপকালে আবুল মনজুর বলেন, “আমি সবসময় সত্য বলতে চেষ্টা করি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরুতে আমি বাসা থেকে একদম বের হতাম না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিসের কাজে অফিসে যেতাম, আবার ফিরে আসতাম বাসায়।বাসা টু অফিস এবং অফিস টু বাসা। এই ছিল আমার নিত্যকর্ম। কিন্তু গরিব সমাজের করুণ চিত্র দেখে বসে থাকতে পারলাম না, ছুটে গেলাম তাদের পানে সহোযোগিতার হাত বাড়াতে। যখনই হোমিও জগতে করেনাভাইরাসরোধি মহৌষধ আর্সেনিক এলবো-৩০ কথা মিডিয়াসহ চতুর্দিকে ছড়িয়ে তখনই অন্ধকারের মাঝে দেখতে পেলাম আশার আলো। এ ঔষধ নিয়ে হোমিও নানান টিপস স্টাডি করলাম। বাবার সাথেও শেয়ার করে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা পাই।
তারপরই শুরু হলো পথচলা।করোনার ভয় তুচ্ছ করে ছুটে গেলে অসহায় দরিদ্র মানুষের ভিড়ে। নিজেদের প্রতিষ্ঠান ‘মমতা হোমিও হল’ থেকে আর্সেনিক এলবো-৩০ সংগ্রহ করে সাধ্যমত অসহায়দের মাঝে বিতরণ করি বিনামূল্যে যা এখনো অব্যহত রয়েছে। সাধারণ মানুষের মাঝে সাড়াও পেয়েছি যথেষ্ট। আমার টার্গেট জেলাব্যাপী সাধ্য অনুযায়ী গরীব সমাজে আর্সেনিক এলবো-৩০ বিতরণ করা। মানুষের উপকারে কিছু করতে পারলে রাতে ভালো ঘুম হয়।
জাতির এই ক্রান্তি লগ্নে আমাদের সবাইকে যার যা কিছু আছে তা নিয়ে অসহায়দের সাহায্য করা উচিত।তবে এক্ষেত্রে সরকারের দেয়া স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। মনোবল শক্ত রেখে করোনাকে জয় করতে হবে। হতাশ হলে চলবে না।
আমার বাবা, আমার শ্বশুর ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন। আপনাদের দোয়া সাথে থাকলে চলমান করোনাযুদ্ধে জয়লাভ করবো ইনশাহআল্লাহ।”
আমাদের দেশের সিংহভাগ মানুষ দরিদ্র। অসহায়ত্ব তাদের উন্নতির প্রধান অন্তরায়। আজ কোভিড-১৯ নামক এক মরণঘাতী ভাইরাস বাসা বেঁধেছে সমাজের পরতে পরতে। কোভিড-১৯ এবং লকডাউনের যাঁতাকলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী আরো বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে। তারা বাঁচতে চায়, বাঁচার অধিকার তাদের আছে। যদি দেশের প্রতিটি মহল্লায় একেকজন আবুল মনজুরের জন্ম নেয় তবে অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী অন্ধকারের মাঝে দেখতে পাবে আশা-ভরসার জ্যোতি।
Really nice presentation. I am happy to see this news. No doubt it will inspire the conscious people. We are proud of you.